
পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব মেয়েদের একটি কমন বিষয়। ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের মানে হচ্ছে একজন নারী পৃথিবীতে নতুন একটি শিশুকে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন। নতুন একজন শিশু মানে আগামীর পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বাহক। সাধারণত প্রতি ২৪ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে নারীদের পিরিয়ড হয়ে থাকে। এটি তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
এই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সবাইকেই সচেতন থাকতে হয়। যেহেতু আমাদের প্রতিদিনের কাজের জন্য, পড়াশোনার জন্য বাইরে বের হতেই হয় তাই বর্তমান সময়ে পিরিয়ড হলে ঘরে বসে থাকার কোন উপায় নেই। আর ঘরে থাকলেও আমাদের দরকার একটু স্বস্তিতে থাকা।
পিরিয়ড চলাকালীন আমরা অনেক কিছুই করি অস্বস্তি কমানোর জন্য। যেমন- পেট ব্যথার জন্য গরম পানির ছ্যাক নেয়া, পিরিয়ডের সময়টা মাথায় শ্যাম্পু না করা, ভারী জিনিসপত্র না তোলা ইত্যাদি। তবে পিরিয়ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন। আমাদের দেশের কোন কোন জায়গায় এখনো পিরিয়ডকে একটি ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। ওইসময় মেয়েদের অশুচি ভাবা হয় এমনকি একঘরেও করে দেয়া হয়।
সামাজিক অসচেতনতার কারনে অনেক জায়গায় বিশেষত গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা পিরিয়ডে স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। পুরনো কাপড় ঠিকমতো পরিষ্কার করে ব্যবহার না করায় সেখান থেকে ছড়াতে পারে রোগজীবাণু, যা হতে পারে জরায়ুর ক্যান্সারের কারণ। তবে, দামের কারনে যারা প্যাড ক্রয় করতে অক্ষম তারা প্রয়োজনে কাপড় ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে, কাপড়টি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। ব্যবহারের পর কাপড়টি ভালো করে সাবান গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে তারপর ব্যবহার করতে হবে। এবং ৪/৫ বার ব্যবহারের পর সেই কাপড় ফেলে দেয়াই উত্তম।
তবে, পিরিয়ডে টিস্যু এড়িয়ে চলা উত্তম। টিস্যু ভিজে নরম হয়ে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে, টিস্যু ছিঁড়ে শরীরের ভেতর চলে যেতে পারে অজ্ঞাতবশত এবং তা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে ফেলে। তবে, প্যাড ব্যবহার করলেই যে আর কোন সমস্যা হবে না এমন নয়। প্যাড ব্যবহারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি প্যাড কখনোই ৪/৫ ঘন্টার বেশি সময় পড়ে রাখা উচিত নয়। আবার প্যাড খোলার পর তা ভালো ভাবে চেক করে নিতে হবে। ইদানীং, বাজারে প্যাডের ভেতর পোকা পাওয়ার মতো ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে। পোকাযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ফলে সেখান থেকে জীবাণু ছড়িয়ে একজন নারীর মৃত্যুও হতে পারে।
প্যাড ব্যবহারের পর সেটিকে অবশ্যই পলিথিনে বা কাগজে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। অনেকে আবার ডাস্টবিনে ফেলার আগে কিছুদিন বাথরুমে রেখে দেয়। এতে করে প্যাডের জীবানু বাথরুমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তা থেকে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ হতে পারে।
অনেকেরই পিরিয়ডের সময় চুলকানি বা ইরিটেশনের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে, প্যাডটি অনেকসময় পড়ে না থেকে সেটি ভরাট হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পাল্টাতে হবে এবং ভালো করে কুসুম গরম পানি দিয়ে নিতম্ব পরিষ্কার করে নিতে হবে।
স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকাও বাঞ্ছনীয়। যেমন- ন্যাপকিন ধরার আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন। কারণ, অপরিষ্কার হাত দিয়ে ন্যাপকিন স্পর্শ করে তারপর তা ব্যবহার করলে সেখান থেকে সহজেই জীবাণু ছড়াতে পারে। এছাড়া ন্যাপকিন পরিবর্তনের সময় ঠিকমতো পরিষ্কার না হয়ে নিলে আগের প্যাড থেকে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
খুব সাধারন ও সহজ কিছু বিষয় মেনে চললেই নিরাপদে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা যায় এবং পিরিয়ড নারীর জন্য অস্বস্তিকর হবে না। তারপরেও যদি কারো সমস্যা হয়ে থাকে যেমন- চুলকানি, জ্বালাপোড়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিংবা একেবারে কম রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত পেট ব্যথা তাহলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। আর সবশেষে সচেতনেতা অতি জরুরি। শুধু নারী নয় সকলেরই নারী স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া এবং পিরিয়ড যে একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয় তা অনুধাবন করা উচিত।
আমাদের পরবর্তী টিপস পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেসবুক পেইজে Mamoniya মামোনিয়া
আরো পড়ুন > গর্ভবতী মায়ের যে ৫টি টিকা নেওয়া জরুরি